হৃদ্গিরী - বাংলা উপন্যাস ( পর্ব - ৩ ) - Ever Fact

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Monday, September 7, 2020

হৃদ্গিরী - বাংলা উপন্যাস ( পর্ব - ৩ )

 


শীতের সকাল, তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম । মামা আমাকে একগ্লাস খেজুর রস এনে দিলেন, এটা খেতে খুব ভাল । কিছুক্ষন পর একটু গরম লাগতে শুরু করলো, তবে এই গরম শীতে সাথে মানিয়ে নেওয়া যায় ।

সকালের নাস্তা করে মামার সাথে মাঠে বের হলাম । গিয়ে দেখি মাঠে অনেক গরু ছাগল রয়েছে এবং সব গরুই মাঠে ঘাস খাচ্ছে । এইসব কিছুক্ষন দেখে আবার মামাবাড়িতে চলে গেলাম।  গিয়ে দেখি নানু আর আমার মামিরা নানা ধরনের পিঠা তৈরি করেছেন । নানু আমাকে তাদের রান্নাঘরে নিয়ে গেলেন এবং আমাকে একটা জায়গার নিয়ে বসালেন । তাদের রান্নাঘরটা অনেক বড়, ঘরের মাঝখানে একটি বড় ঢেঁকি যা আমি বইতে দেখেছিলাম।

নানু এবং আমার মামিরা আমার পাশে বসে প্রথমে আমার পরিবারের সবার কথা জানতে চাইলেন । এমনকি আরও নানান বিষয় নিয়ে তারা আমার সাথে গল্প করলেন । আমি সাধারনত বেশি কথা বলি না, তবে এখানে এসে অনেক কথা বলছি । একসময় নানু কথার ফাকে বলে উঠলেন

- তুমি কী নীলা সম্পর্কে জান?

- নীলা, মানে ঐ যে আমাকে দুধ খেতে দেখে হেসেছিল । হ্যা, জানি তো । ও তো ছোট মামার মেয়ে । তবে এতটুকু বলতে পারি যে, ও অনেক দুষ্টু প্রকৃতির মেয়ে এবং অকারণেই হাসে । ওর সপম্পর্কে জানার কী আছে ।

আমি দেখলাম সবাই একটু করে লুকিয়ে হাসছে । আমি নানিকে বললাম,

- নানু কী হল, তোমরা হাসছ কেন ?

তখন নানু কোনো কথা কিছু বললেন না । তারপর আমার ছোট মামি বললেন,

- বাবা তুমি তোমার বাড়িতে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা কর যে, তোমার নীলার সাথে কী সম্পর্ক ।

আমি মনে মনে ধরে নিলাম কী আর হবে, ওতো আমার মামাতো বোন । আমি আর বেশি চিন্তা করলাম না । যাইহোক সকালের নাস্ত খাওয়ার পর পিঠা খেয়ে আমার ইচ্ছা করছে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিতে । তাই আমি বিশ্রাম কক্ষে গেলাম । বিছানায়গিয়ে বসা মাত্রই দেখি আবার নীলা হাজির খুব গম্ভির আর হালকা রাগি মুখ নিয়ে করে। আমি বললাম,

- তুমি এখানে কেন ?

সে কথা না বলে একবার আমার মাথা থেকে পা পরযন্ত দেখল। তারপর বলল,

- আপনিতো আমার বয়সে বড় । সবাই আপনাকে মাস্টারভাই বলে ডাকে ।

- হ্যা ।

- আমারও নিশ্চয় তা ডাকা উচিত ?

- তোমার কী মনে হয় ?

- সবাই যেহেতু ডাকে তাই আমারও ডাকা প্রয়োজন ।

- তাহলে ?

- তবে আপনাকে মাস্টারদের মতো দেখতে লাগে না।

- মাস্টারদের মতোই হওয়া কী অধিক প্রয়োজন ?

- এসব কথা বাধদিন । এটা বলুনতো, সবাই আপনাকে মাস্টার ভাই বলে ডাকে কেন ?

- হয়তো আমার শিক্ষার জন্য । আমি তৃতীয় শ্রেনি পরযন্ত ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছি ।

- আমিও তো তৃতীয় শ্রেনি পযন্ত ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছি । তাহলে তো সবাই আমাকে মাস্টার আপু বলে ডাকার কথা ?

- আমি জানি না ।

- এটা তো অন্যায় ।

- ঠিক আছে, তোমার আমাকে যা ডাকার ইচ্ছা তাই ডেক । আমি কিছু বলব না ।

- তাহলে তো আমি আপনাকে বড়দের আরালে আপনার নাম ধরে ডাকতে পারি ?

- বড়দের আরালে কেন, সবার সামনেই ডেক ? আমি কারর উপর জোর করে কিছু চাপাই না ।

- না সবার সামনে আপনাকে নাম ধরে ডাকলে আমাকে প্রহার করা হতে পারে। তাহলে মিরাজ আসল কথায় আসা যাক, তুমি নাকি আমার নামে বলেছ আমি একটি প্রকৃতির দুষ্টু মেয়ে ?

- তোমার সম্পর্কে সত্যি কথাটাই আমি তাদের বলেছি ।

- তবে শুনে রেখ, আমাকে যতটা দুষ্টু মনে করছ, আমি কিন্তু তার চেয়েও ভয়ানক ।


এই বলে সে চলে গেল। আমিও ঘুমাতে শুরু করলাম । আমার ঘুম প্রায় লেগে এসেছে, তখনই চালে কিছু পড়ার আওয়াজ পেলাম । আমি তখন টিনের চালের একটি ঘরে শুয়ে ছিলাম । আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেল । আমি এটা নিয়ে চিন্তা না করে আবার ঘুমিয়ে গেলাম । কিন্তু কিছুক্ষন পরে আবার সেই আওয়াজ । এইবার আমি শুনলাম একসাথে অনেকগুলো ঢিল মারার আওয়াজ । আমি সাথে সাথেই বের হই আর দেখি নীলা আর কয়েকটা ছেলে আমার কক্ষ অনুসরণ করে ঢিল মারছে। আমি আর কী করব, ঘুম হই নি তাই গোসল করতে গেলাম বাথরুমে, আমার জুতা বাথরুমের বাইরে রেখে গেলাম । ফিরে এসে দেখি আমার জুতা নেই । আমি খালি পায়েই বের হলাম তারপর বাইরে বের হয়ে দেখি আমার জুতা উঠানে । আমি জুতা পায়ে দিয়ে পুকুরে গিইয়ে আবার পা পরিষ্কার করলাম । সেদিন আমার খুব রাগ হয়েছিল । ঐ দিন নীলা আর কিছু করলনা । পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়েই আমি উঠানে হাটছিলাম । এমন সময় একটা ক্রিকেট বল আমার মাথায় ভিষন কর লাগল । আমি খুব রাগ করে তাকিয়ে দেখলাম, নীলা আর তার কয়েকটা ভাই-বোন ক্রিকেট খেলছে । আরও অনেক ভাবে সে আমার সাথে অভদ্রতা করল । যেমনঃ- লবনের তৈরি পিঠা খাওয়ানো, শীতের সকালে আমি ঘুমন্ত অবস্থায় ফ্যান ছেড়ে দেওয়া, ধাক্ষা দিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়া ইত্যাদি । ও এই সব করছে, আর আমি হাসি মুখে তা সহ্য করছি । কারণ আমার মা আমাকে বলেছিলেন ,

( দেখ বাবা তোমার মামা বাড়িতে তোমার অনেক ছোট ভাই-বোন রয়েছে । তারা তোমার সাথে অনেক দুষ্টামি করতে পারে । আমি আশা করি তুমি নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করে চলবে। )

আর তাই আমি মায়ের আশা ভঙ্গ করতে চাই না, সেই জন্য এখনও আমি নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করছি । না, মামা বাড়িয়ে আমি যতেষ্ট আদর পাচ্ছি, তবে নীলার এই রকম যন্ত্রনা এর  তুলনায় বেশি । তাই আমি কোনোটাই ভুলতে পারব না।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad