লহরী - বাংলা উপন্যাস ( পর্ব - ২ ) - Ever Fact

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Saturday, September 5, 2020

লহরী - বাংলা উপন্যাস ( পর্ব - ২ )

সাথে সাথে  মনে পড়ে আমার সেই পুরনো দিনগুলোর কথা। যখন আমাকে কেউ মানুষ মনে করতো না। সম্পুর্ন অবহেলা করে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতো আমাকে। আর আমি কখনই সেই দিনগুলো ফিরে পেতে চাইছিলাম না। তবুও আমি চুপ করে তাদের কথা শুনছিলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে তারা আমার উপর হাত তুলে। তারা ধীরে ধীরে আমার পুরনো সৃতি মনে করে দিচ্ছিল। এখন আমি আর নিরব থাকতে পারলাম না। তখন আমি প্রকট হই, ধারন করি আমি আমার তৈরি আমার রুদ্রো রুপ। রাগে আমার দুই চোখ লাল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আমি তাদের উপর প্রহার করি। আমার প্রহারে তারা কিছুটা  অবাক হয়। আমার রুদ্রো রুপ ধারন করলে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারি না এমন কী আমার মুখও নিয়ন্ত্রন করতে পারি না। অনেক কষ্টে অনেক অশ্রু জলে শিক্ত আমার হৃদয়ের মহিমা দ্বারা সৃষ্ট আমার এই তান্দব রুপ। যখন কোনো মানুষ সমাজে খুব বেশি অবহেলিত, প্রতি ক্ষেত্রে আঘাত প্রাপ্ত হৃদয় যে কেউ নিজের রুদ্রো রুপ তৈরি করতে পারে আর সেটা উপযুক্ত স্থানে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়। আজ দিন এসেছে পরিবর্তনের, আজ দিন এসেছে প্রতিবাধের, আজ দিন এসেছে নিজের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করার। এই রুদ্রো রুপেই আমি কেমন আজব কথা বলছিলাম। খুব রাগের সাথে আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল,

- এখন পরযন্ত নিজের সাথে যুদ্ধ করে আসছি। নিজের সার্থে নিজের সম্মানের সার্থে আমি যেকোনো কিছু করতে পারি। আর তোমরা আমাকে আঘাত করেছ, আমার সম্মানে আঘাত করেছ। এখন যদি তোমাদের কিছু না করি তাহলে আমার রুদ্রো রুপের অপমান হবে। আমি সব সহ্য করতে পারি, তবে যদি কেউ আমার সম্মানে আঘাত করে তাহলে আমি এটা কখনই সহ্য করতে পারিনা। তবে আমি আজ নিজের রুদ্রো রুপ শান্ত করার চেষ্টা করবো, কিন্তু যদি দ্বিতীয়বার এই ভুল হয় তাহলে কিন্তু বিশাল বড় বিপদ অপেক্ষা করতে তোমাদের জন্য। 

আমি তো নিজের রুদ্রো রুপ নিয়ন্ত্রন করলাম কিন্তু আজ যে আমার মন শান্ত হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আটারো বছরের আঘাতগুলো আজ একত্র হয়েছে। জায়গায় ভীর জমা হয়ে গেল। আমার এক বন্ধু আমাকে এখান থেকে সড়িয়ে নিয়ে গেল এবং আমাকে নিয়ে একটা আলাদা ক্লাসে প্রবেশ করলো, যেখানে আর কেউ ছিল না। সে অবাক হয়ে আছে। তবুও সে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো,

- বন্ধু এইসব কী শুরু করলে?

- কেউ যদি আমার সম্মানে আঘাত করে তাহলে আমার রুদ্রো রুপ বের হয় যা আমি নিজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারি না।

- রুদ্রো রুপ! কী সেটা?

- আমার মনের সব কষ্ট একত্রিত হয়ে একটা শক্তি তৈরি হয়। সেটা কী করে তৈরি হয়েছে আমি নিজেও জানি না।

- তাহলে?

- জানিনা কী করে আমার পুরনো দিনের কথা মনে পড়লে আমার রুদ্রো রুপ এমনিতেই তৈরি হয়।

- কী তোর পুরনো দিনের কথা? কী হয়েছিল তোর সাথে?

- তাহলে শুন

[ আমি একটা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেই। আমার জন্মের আগে থেকেই আমি কিছু বিষেশ কিছু অধিকার পাই। আমার বাবা ছিলেন আমার দাদুর ছোট ছেলে আমি ছিলাম আমার বাবার বড় ছেলে। আমার বাবা চাচা মোট ৪জন ছিলেন। তারা একত্রে বসবাস করতেন এবং আমার অনেক বড় ভাই বোন ছিল। আমিই ছিলাম সবার ছোট, তাই সবার একটু বেশি আদরের। বিশেষ করে দাদুর কাছে। সবার আদর পাবার অধিকারটা আমার জন্মগত। আর আমার আদর আরও বৃদ্ধি পায় এই কারনে যে আমিই ছিলাম আমার বাবার একমাত্র ছেলে। সুতরাং আমিই সবার ছোট। প্রায় ৬ বছর পর আমার একটা বোন হয়। দাদু অনেক আদর করে আমার নাম রেখেছিলেন “ শাহরিয়াজ “। নামটা একটু জটিল তাই কেউ কেউ আমাকে অপু বলেও ডাকে। মানে আমার ডাক নাম হয় অপু। আমি সবারই একটু বেশি আদরের ছিলাম। তবে আমার কয়েকজন ভাই বোন আমার উপর হিংসা করেন। আমি সেটা সম্পুর্নই বুঝতে পারতাম। তা যাই হউক, বাড়িতে আমার যেমন আদর ছিল দাদুর দৌলতে গ্রামেও মানুষ আমার সম্পর্কে ভাল ধারনা করতো। এমনও অনেক আছে যারা আমাকে দেখেইনি, তবুও তাদের কাছে আমার সম্পর্কে ভাল ধারনা ছিল। আমার দাদু ছিলেন গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান এবং অন্যান্য গ্রামের বিশেষ সম্মানীয় ব্যাক্তি। উনার দৌলতে আমিও লোকের সম্মান মন থেকে পাই। কেউ হয়তো আমাকে দেখলে চিনতো না তবে শাহরিয়াজকে সবাই চিনতো। আমার বাবা প্রবাসে থাকেন, তাই বাবাকে বেশি পাই না। ছুটিতে আসলে বেশিদিন থাকতে পারেন না। আমার পরিবারের সবাই আমাকে খুব ভালবাসে।আমি যা করতাম সেটাই ঠিক তা ন্যায় হউক বা অন্যায়। আমার দাদুর জন্য কেউ আমার অন্য বের করতে পারতো না। আর যদি কেউ আমার নামে নালিস করতো তাহলে দাদু তাকে লাটি দিয়ে তাড়া করতেন। এই সুযোগে আমিও একটু বেশি দুষ্টামি করতাম। আমার এখনও মনে আছে আমি একদিন দুষ্টামি করেছিলাম আর আম্মু আমাকে মেরেছিলেন। যার ফলে দাদু আম্মুকে অনেক বকেন। এতটাই স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল আমাকে। তারপর আমার বোনের জন্ম হয়। আমি আদর করে তার নাম রাখি “ অর্পা “। আমার কাছে থেকে সম্পুর্ন ভালবাসা পেয়েছিল আমার বোন অর্পা। আমিও লেখা পড়া শুরু করি। আমার বোনের উপর আর দাদুর ভালবাসা জুটলো না। অর্পার দুই বছর বয়সে দাদু মারা যান। তখন আমি প্রথম কেদেছিলাম। দাদুর মৃত্যুতে সবাই ভেঙে পড়েছিল শুধু অর্পা ছাড়া। তখন তো অর্পার তেমন বোধ শক্তিই জন্মায়নি। দাদুর মৃত্যুর কিছু দিন হয়ে গেল আর শুরু হয় আমাদের পরিবারের ধ্বংস যোগ্য। দাদু ছিলেন আমাদের পরিবারের খুটি। দাদুর মৃত্যুর পর পরিবারটা ধ্বংস হতে শুরু করে।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad