হৃদ্গিরী - বাংলা উপন্যাস ( পর্ব - ২ ) - Ever Fact

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Saturday, September 5, 2020

হৃদ্গিরী - বাংলা উপন্যাস ( পর্ব - ২ )

একদিনে ৩টি ক্লাস সম্পন্ন হয়েছিল । দুপুর একটায় ছুটি হয় আমাদের, অনেক আনন্দ করেছিলাম সেদিন । বাহিরে এসে দেখি দাদু আর দুবে ভাই আমাকে নেওার জন্য অপেক্ষা করছেন । দুবে ভাই হলেন আমাদের একটি গাড়ির ড্রাইভার। আমি দাদুর সাথে রাজিব আর রিতার আলাপ করালাম । তার কিছুক্ষন পরে রাজিবের বাবাও চলে আসেন রাজিবকে নেওয়ার জন্য । দাদু কিছুক্ষন রাজিবের বাবার সাথে আলাপ করলেন । তারপর দাদু বললেন,

উনি তোমার এক চাচা, উনাকে সালাম কর।

আমি উনাকে সালাম করলাম তারপর যে যার বাড়ি চলে গেলাম। আমি আর দাদু বাড়ি এসে দুপুরের খাবার খেলাম এবং তার পর উঠানে ক্রিকেট খেললাম ।

এইভাবে দাদু আমকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যান । রাজিবের সাথে আমার বন্ধুত্ত আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠল । আমি দাদুকে নিয়ে রাজিবদের বাড়িও গেলাম, রাজিবও তার বাবাকে নিয়ে আমাদের বাড়িও এসেছিল ।

এইভাবেই এক বছর সময় কেটে যায় । সময় আসে পরিক্ষার ফলাফল বের হওয়ার। পরিক্ষার ফলাফল বের হয়, আমি প্রথম হই, রাজিব ২০ আর রিতা ২১ । রাজিব আর রিতার মধ্যে মাত্র ১ নম্বরের ব্যবধান ছিল । রাজিবতো তা দেখে রেগে ফায়ার এবং নানাভাবে জনাবদের গালি দিতে লাগলো । আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম,

- দেখ বন্ধু যা হবার তা তো হয়েছেই । এখন আর কী করবি ?

- কী  বলছ বন্ধু! এতো কষ্ট করে পরিক্ষা দিলাম, আর সালা কী করে আমাকে ১ নম্বর বেশি দিল ?

- মানে ! কী বলছ বুন্ধ?

- আরে ভাই তুমি পরিক্ষার সময় আমায় যা উত্তর লিখে দিয়েছিলে একই উত্তর আমি নিজের হাতে রিতার খাতায় লিখে দিয়েছিলাম । তাহলে কী করে তারা আমাকে ১ নম্বর বেশি দিবে ?

রাজিবের এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে রাজিবকে,

- দেখ বন্ধু, তোমার এতো নেকামি নাটক আমার পছন্দ হয় না। আমি ভাবলাম কিনা খারাপ ফলাফলের জন্য তুমি রাগ করছ ।

- এটা খারাপ রেজাল্ট হতে পারে না বন্ধু। আমি কী করে রিতার চেয়ে বেশি নম্বর পেতে পারি ।

তারপর আর কী করার, রাজিবকে তার মত অনুযায়ী বুঝিয়ে তার বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। আমার বাড়িতে আমার রেজাল্ট শুনে সবাই খুব খুশি হন ।

তারপর ডিসেম্ভরের ১৮ তারিখ আমি একাই মামার সাথে মামার বাড়ি যাই। আমার ৪ মামা ছিলেন এবং তাদের একমাত্র বোন হলেন আমার মা । মামা বাড়িতে আমার মামাতো ভাই-বোনারা প্রায় সবাই আমার ছোট । তাই সেখানে আমাকে সবাই মাস্টার ভাই বলে ডাকতো । আমার বোধ হওয়ার পর এই প্রথম আমি আমার মামাবাড়ি যাচ্ছি । আমার মামাবাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে । সেখানে যেতে যেতেই অনেক সময় কেটে যায় । আমরা সকাল ৯টায় আমাদের বাড়ি থেকে বের হই । তারপর ভটভটি দিয়ে কিছু পথ যাই । ভটভটি দিয়ে বাস পয়েন্ট পরযন্ত যাই এবং বাস পয়েন্টে দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করার পর এক বাসে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা যাবার পর পরের বাস ধরার জন্য মামা টিকেট কিনতে যান । কিন্তু সেখানকার রাস্তা খারাপ হওয়ার জন্য বাস পরের দিন ছাড়বে বলে জানা যায় । কী  আর করার, ঐ রাতের জন্য মামা একটা ঘর ভাড়া করেন । সেখানকার খাবার তেমন ভাল ছিল না তাই আমি উপযুক্ত খাবার খেতে পারিনি । যাহোক পরের দিন সকাল ৯টায় বাস ছাড়লো। সকাল ১০টায় এক নদীর ধারে গিয়ে দাড়ালাম । তারপর আমার নানা আর আমার মামাতো ভাই নৌকা নিয়ে পাড়ে আসলেন । আমি এই প্রথম আমার মামাতো ভাইদের দেখছি । এরা দুজনই শুধু আমার বড় আর সবাই আমার ছোট। তারপর নৌকায় মামাবড়ি পৌছালাম।

গিয়ে দেখি অনেক ছোট ছেলে-মেয়ে, মামা বললেন,

- এই দেখ, তোমাদের মাস্টার ভাই ।

তারপর সবাই মাস্টার ভাই বলে চেচাতে লাগলো । আমার খুব খারাপ লাগছে। তবে কী আর করার, এসেছি যখন তখন তো থাকতেই হবে । তবে আমাদের বাড়ির পরিবেশ থেকে এটি সম্পূর্ন আলাদা । উঠান একটা খোলা ময়দান, পূর্বদিকে দালান কোটা আর পশ্চিমদিকে মাটির ঘর, উত্তরদিকে পুকুর আর দক্ষিন দিকে গরুর ঘর, বাড়ির পশ্চিমের একপাশে একটা সরু রাস্তা । তবে বাড়িটা বেশ বড় । আমরা ঐ রাস্তায় প্রবেশ করলাম ।বাড়িতে অনেক ছোট বাচ্চা রয়েছে । ঘরে প্রবেশ করতেই আমার বড় মামা আমাকে কোলে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করাতে লাগলেন । তারপর মামা আমকে একটা উচুখাটে বসালেন এবং আমার নানি আমাকে একগ্লাস দুধ খাওয়ার জন্য দিলেন। আমি দুধ খেতে খুব ভালবাসি, তাই খুব শখ করে দুধ খেতে শুরু করলাম । কিন্তু একী ! এটি তো টক । আমি সাথে সাথে তা ফেলে দিলাম, আর বললাম

- নানু দুধ এতো টক কেন ?

পেছনের ঘর থেকে একটি মেয়ে হাসতে হাসতে বলল,

- ওটা দুধ নয়, ওটা মাঠা ।

এই বলে সে অনেকক্ষন হাসল । জানতে পারলাম ও আমার ছোটমামার মেয়ে নীলা । সন্ধারপর আমার মামাতো ভাই আর নানা ভাই আমাকে তাদের হাট দেখাতে নিয়ে গেলেন ।  আমার মামাবাড়ি ভাটি এলাকায়, তাই তাদের চলাচলও ভিন্ন প্রকার । হাট থেকে আসারপর সবাই মাটিতে পাটি বিছিয়ে খেতে শুরু করলেন । রাত প্রায় ৮টা বাজে, খাওয়ার পর্ব শেষ । মনে মনে বললাম,

- একি পরিবেশে এসে পরলাম রে বাবা । এরাতো দেখছি সন্ধাবেলাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।

খাওয়া শেষে নানু আবার আমাকে একগ্লাস দুধ খাওয়ার জন্য দিলেন । এখন আমি আর অপেক্ষা করলাম না । সরাসরি বলে উঠলাম,

- নানু, সত্যিকরে বলতো এটা কী ?

- এটা দুধ নানুভাই । আমাদের এলাকার খাটি গরুর দুধ ।

তারপর আমি দুধ খেলাম এবং খেয়ে দেখলাম যে আমাদেরর এলাকার দুধের চেয়ে এর স্বাদ অধিক । 

ছোটমামা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমি মামাকে বললাম,

- মামা, চল আমরা মাটির ঘরে গিয়ে থাকি ?

- ওখানে না থাকাই উত্তম । কারণ ওখানে অধিক মশা থাকে ।

আমি তবুও জোর করেই মাটির ঘরে থাকলাম । এক অন্য রকর অনুভুতি হচ্ছে, আমি এর আগে কখনো মাটির ঘরে থাকিনি । মশারি টাঙানো হল, চারিদিক থেকে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করতে শুরু করল । মামা বললেন

- এই সময় সাধারনত কেউ এই ঘরগুলোতে থাকে না । কারণ এখন খুব বেশি ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করে । তবে গরমকালে সবাই এই ঘরগুলোতে থাকে।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad