উপেক্ষা অনর্থক - বাংলা উপন্যাস (পর্ব - ৫) - Ever Fact

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Monday, September 7, 2020

উপেক্ষা অনর্থক - বাংলা উপন্যাস (পর্ব - ৫)


তবে বেশিদিন সে এভাবে চলতে পারলো না। সপ্তম শ্রেণিতে নতুন ক্লাস শুরু হয়েছে। এরই মাঝে সপ্তম শ্রেণিতে একজন নতুন ছাত্রী ভর্তি হয়। নতুন ভর্তি হওয়ায় শিক্ষক তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। ফারহান সাধারনত কারর দিকেই তাকায় না। তবে শিক্ষক যখন সবার সামনে মেয়েটাকে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন তখন ফারহানও সামনে তাকায়। মেয়েটির কোনো বর্ণনা আমি পাইনি। শুধু নামটা জানতে পেরেছি। মেয়েটির নাম ছিল রিয়া। ফারহান একবার মেয়েটা দিকে তাকায়। তারপর আর তাকায়নি। সে ক্লাসে মন দেয়। প্রতিটা ক্লাস করানোর পরে একজন শিক্ষক যেতে আর অন্য শিক্ষক আসতে পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় লাগে। ফারহান কেন যেন শিক্ষক যাবার পরে মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করলো। হয়তো মেয়েটা দেখতে সুদর্শন ছিল। আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না। কারণ ফারহানের জীবনের কাহিনী আমি অন্য একজনের মুখে শুনেছি। আর বাস্তবেও আমি কখনও ফারহানকে দেখিনি। যাই হউক সেসব পরে বলা যাবে। এখন ফারহানের কথা বলাই ভাল। ফারহান মেয়েটাকে দেখতে পায়। মেয়েটাও ফারহানের মত ক্লাসে কারর সাথে কথা বলে না আর একদম নিরব থাকে। অনেকেই চেষ্টা করেছে তার সাথে কথা বলার জন্য। তবে সে কারর সাথেই কথা বলে না। ফারহান এই প্রথম ক্লাসে কোনো মেয়ের দিকে তাকায় এবং সেখানেই ধরা খেয়ে যায় মেয়েটার কাছে। মানে ফারহান যে মেয়েটাকে দেখছে সেটা মেয়েটা বুঝতে পারে। ফারহান সাথে সাথে তার চোখ সড়িয়ে ফেলে। তারপর আবার কিছুক্ষন পরে সে মেয়েটার দিকে তাকায়। মেয়েটা বার বার বুঝতে পারে। তবে মেয়েটা কিছু বলে না আর রাগও করে না। ফারহান এখন প্রতিদিন মেয়েটাকে দেখে। কোনো কোনো দিন মেয়েটার পিছনে পিছনে সাইকেল চালিয়ে যায়। মেয়েটা একাই বাসায় যায়। তবে মেয়েটার বাসা কোথায় ফারহান জানতে পারেনি আর জানার চেষ্টাও করেনি।

এভাবে ফারহান এক বছর মেয়েটার পিছনে পিছনে ঘুরতে ঘুরতে থাকে। মনে হয় তার মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি হয় মেয়েটার প্রতি। তবে সে এ ব্যপারে কাউকেই বলতে পারে না। আর কাকেই বলবে। তার তো বাস্তবে এসব কথা বলায় মত কেউ নেই। যাকেই বলবে সেই তাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে। তাই সে কাউকেই বলেনি।

অষ্টম শ্রেণিতে ক্লাসের সবার মধ্যে প্রথম হয় ফারহান আর দ্বিতীয় হয় রিয়া। এখন অবস্থা কিছুটা আলাদা। ফারহান যখন রিয়ার দিকে তাকায় তখন রিয়াও ফারহানকে দেখে হালকা হাসে। বলতে গেলে এটা ঠাট্টার হাসি নয়। তবে ফারহান এসব বুঝতে পারেনি। আর তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যও কেউ ছিল না।

নবম শ্রেণির মাঝামাঝি সময় ফারহান বুঝতে পারে যে সে প্রেমে পড়েছে। তবে সে এটা কাউকে বলতে পারছে না। আর রিয়াকেও বলার সাহস পাচ্ছিল না। তার তো একটাই ভয় ছিলো যে, সে কারর ভালবাসার যুগ্য নয়। এই ভয়ে সে রিয়াকে কিছুই বলেনি। তারপর ফারহান দশম শ্রেণির পরিক্ষা দেয়। পরিক্ষার রেজাল্টে দেখা যায় ফারহানের আর রিয়ার ফলাফল সমান থাকে। তাই গত বছরের হিসাবে ফারহানের রোল নং এক থাকে আর রিয়ার দুই।

শুধু রেজাল্টেই নয়, ক্লাসে যদি প্রথমে ফারহানকে কিছু প্রশ্ন করা হয় তবে তার পরের প্রশ্নই করা হয় রিয়াকে, যদি কোনো লটারির মাধ্যমে দলীয় কোনো কাজ করতে দেওয়া হয় তবে বেশিরভাগ সময়ই ফারহান আর রিয়া একসাথেই থাকে। বলতে গেলে এভাবে ধরে নিতে পারেন যে আল্লাহ যেন নিজেই তাদের জুটী তৈরি করেছেন এবং তাদের একসাথে রাখছেন। আমার মতে তাদের দুজনকে এসব কাজ আরও বেশি আবেশিত করছে। তবে আমি সঠিক করে কী বলতে পারবো কী খেলা খেলছেন আল্লাহ।

বহুদিন হয়ে যায় তারা এক স্কুলে আছে, একে অপরকে প্রতিদিন দেখে আর আমার তো মনে হয় একে অপরকে ভালও বাসে। তবুও তারা কেউ কাউকে কিছুই বলছে না। ফারহান তো ভয়ে কিছুই বলছে না। কারণ সে তো জানতেই পারেনি যে রিয়াও তাকে ভালবাসে। তার এসব প্রেমের সংকেত সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই। আর দ্বিতীয়ত সে এখনও বিশ্বাস করে যে, সে কারর ভালবাসা পাবার যুগ্য নয়। তাই সে কিছুই বলতে পারে না।


আর অন্যদিকে রিয়া হয়তো মেয়ে হয়ে লজ্জায় এসব বলতে পারছে না। আমি ঠিক করে বলতে পারব না রিয়া কেন বলছে না। তবে আমার কাছে এটাই মনে হয়। কারণ আমার মনে হয় একটা সাধারন মেয়ের এতটা সাহস হবে না যে কাউকে তার মনে কথা প্রথমে বলতে পারবে। কারণ আমার মতে বর্তমান যুগের মেয়েরাই হউক না কেন, আর বর্তমান যুগের অধুনিক মেয়েরাই হউক না কেন। তারা অবশ্যই এসব ব্যপারে কিছুটাও হলে লজ্জা পাবে। আর যখন প্রশ্ন উঠে রিয়ার মত মেয়ের তখন তো কোনো কথাই নেই। রিয়া খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে। আমার মনে হয় রিয়া হয়তো নিশ্চয় ভয়ে বলতে পারছে। আর অন্যদিকে ফারহান তো নিজের উপরই বিশ্বাস রাখতে পারেনি।

দেখতে দেখতে তাদের স্কুল থেকে বিদায় অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়ে যায়। আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসারে মাধ্যমিক পরিক্ষার আগেই বিদায় অনুষ্ঠান করে ছাত্র ছাত্রীদের স্কুল বিদায় দেওয়া হয়। বিদায় অনুষ্ঠানের দিন ফারহান আর রিয়ার চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। যতটা কষ্ট পাচ্ছে তারা স্কুল ছেড়ে যেতে তার চেয়ে বহুগুন বেশি কষ্ট পাচ্ছে তারা এইভেবে যে তাদের আর কখনও দেখা হবে না। তারা দুজনেই সব নীরবে সহ্য করে গেছে। কেউ কাউকে কিছুই বলেনি। স্কুল থেকে তারা বিদায় নিয়ে যায়।

পরিক্ষার সময় এলে তারা এক স্কুলেই পরিক্ষা দেয়। তবে তারা একে অপরের দেখা আর পায়নি। ফারহান অবশ্য রিয়ার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছিল। তবে সে রিয়ার সাথে দেখা করতে পারেনি। হয়তো রিয়াই ইচ্ছা করে ফারহানকে দেখা দিতে চায়নি। পরিক্ষার শেষ দিন পর্যন্ত ফারহান রিয়ার সাথে দেখা করার ইচ্ছা করেছিল। তবুও সে রিয়ার সাথে দেখা করতে পারেনি।

পরিক্ষা শেষে ফারহান বাড়িতেই থাকে। সেই আগের মত একা। তবে এখানে একটু আলাদা ছিল। সে সারা দিনের মধ্যে ঘর থেকেই বের হয় না। সারাদিন রিয়ার কথা ভাবে। আর বার বার তার আফসুছ হয় যে, কেন সে রিয়াকে তার মনের কথা বলেনি। কিছুতেই সে রিয়াকে ভুলতে পারেনা। সব সময় রিয়ার কথা তার মনে হয়। বার বার তার চোখে ভাসে রিয়ার সেই চোখের জলে ভেজা দুইটা চোখ। বাড়িতে ফারহানের এমন অবস্থা দেখে তার মা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনিও বুঝতে পারেন না উনার এমন শান্ত ছেলের কী হয়েছে। সারাদিন অকারণেই কাদে যা ফারহানের আম্মু ভাল করেই বুঝতে পারেন। 

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad