হৃদ্গিরী - বাংলা উপন্যাস ( পর্ব - ১ ) - Ever Fact

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Thursday, September 3, 2020

হৃদ্গিরী - বাংলা উপন্যাস ( পর্ব - ১ )


আজ ৭ই মার্চ ২০১৭ রাত প্রায় ২টা । ক্যালেন্ডারের পাতায় একটি নতুন দিন যুক্ত হয়েছে ।  বাড়িতে বোধ হয় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কারণ এতো রাতে কারর জেগে থাকার কথা নয় । আমি একা ঘরে বসে টিভি দেখছি । ঘুম আসছে না । কিছুক্ষন টিভি দেখতে দেখতে আর ভাল লাগছে না। এক সময় দেখলাম দরজার সামনে একটা আবছা ছায়া । কিছুটা ভয় পেলাম । খুব গরম ছিল  তখন । ছায়াটি আরও একটু কাছে আসতে শুরু করল । তারপর আমার একটু ভয় কমলো । কারন ছায়াটাতো আমার চেনা ছিল । সে হল আমার বন্ধু রাজিব । ছোটবেলা থেকেই আমরা আন্তরঙ্গ বন্ধু। আমরা একসঙ্গে প্রাইমারি পড়েছি । আমার জীবনের প্রথম বন্ধুই ছিল রাজিব । আমরা যখন চতুর্থ শ্রেনিতে পড়ি তখন রাজিবের পরিবারে একটি দুর্ঘটনা ঘটে । রাজিবের বাবা ছিলেন হাইকোটের উকিল। কাকে যেন একটা কেস জিতিয়ে দেন এবং বিপক্ষরা রাজিবদের বাড়িতে হামলা করে। সেই রাতে হামলায় রাজিবের দাদা,দাদি এবং তার মা নিহত হন। পরদিন সকালে রাজিবের বাবা তিনটি কবরে তিনটি লাস দাফন করলেন । তার ঠিক পরেরদিন রাজিবের বাবা রাজিবকে নিয়ে লন্ডন চলে গেলেন । সেদিন রাজিব খুব কেঁদেছিল । যাবার আগে রাজিব বলেছিল বন্ধু,

- চিন্তা কর না, আমাদের মিত্রতা যদি খাটি হয়, তাহলে আমাদের আবারও দেখা হবে।

 আর রাজিবের বাবা আমাকে বলেছিলেন যে, আমি যেন জীবনে বেশি সৎ না হই । আল্লাহ তাকে সততার এক বিশাল পুরষ্কার দিয়েছেন , যা তার সব সুখ কেড়ে নিয়েছে । তারপর তারা চলে গেলেন । রাজিব যাবার সময় খুব কেঁদেছিল । বন্ধু হারিয়ে আমিও খুব কেঁদেছিলাম । দির্ঘ্য ১২ বছর রাজিবের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না । আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম তার সঙ্গে যোগাযোগ করার কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি । তখন থেকেই রাজিব আমার মনের মধ্যেই থাকে এবং আমার মনের মধ্যেই তার ছায়া সৃষ্টি হয় এবং তা সব সময় আমার পাশেই থাকে। এখন আমার বয়স ২২ বছর।

আমি সিলেট শহরের কাছে একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহন করি । আমাদের পরিবারে মা-বাবা,চাচা-চাচি,ভাই-বোন এবং দাদা-দাদি মিলে প্রায় ৫০এর অধিক সদস্য ছিলেন । আমার দাদা এবং দাদি দুজনই ব্যারিষ্টার ছিলেন । ১৯৯৫ সালের ২০ই অক্টোবর আমি এই পৃথিবীতে আসি । আমার বাবা ছিলের তার বাবার সবচেয়ে ছোট ছেলে । আমার বাবা চাচা ছিলেন মোট ৬জন এবং ৩জন ফুফু ছিলেন । তাদের সবার চেয়ে ছোট ছিলেন আমার বাবা। আমিই ছিলাম আমার বাবার একমাত্র সন্তান সাথে সাথে আমিই ছিলাম পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য । আমরা মোট ৩২জন ভাই-বোন ছিলাম। তাদের মধ্যে ২০জন ভাই এবং ১২ জন বোন ছিলেন । এতো বড় পরিবার হওয়া সত্বেও আমরা সবাই একত্রে ছিলাম । সিলেট শহরে আমাদের অনেক বড় কাপড়ের একটা দোকান সহ একটা রেষ্টরা ছিল । সবাই মিলে এই দুইটি পরিপূর্নভাবে চালাতেন । আমাদের বাড়িতে সবাই রাতের খাবার একসঙ্গে খান । আমি ছোটবেলা থেকেই দাদু-দিদার সাথে থাকতাম । এমনকি দাদু-দিদার সাথে ঘুমাতামও। ছোটবেলা থেকেই আমি মাকে ঠিক মতো পাই নি। আমি যখন একটু বড় হই তখনইমা পরিবারের নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছিলেন । দাদু-দিদার কাছেই আমি বড় হই । তারপর আমার মাকে বেশি প্রয়োজন হয় নি ।আমি ছিলাম একটু অন্যরকম । আমি কোনো ধরনের খেলাধুলা করতাম না । তবে দাদু আমাকে ক্রিকেট শেখান এবং আমাদের বাড়ির উঠানে ক্রিকেট আমি আর দাদু ক্রিকেট খেলতাম । আমাদের বাড়ি ছিল অনেক বড় তবে দরজা-জানালা ছাড়া বাড়ির উঠানেও আলো প্রবেশ করত না । খেলা করার জন্য আমাদের একটা ছোট মাঠ ছিল । আমরা গ্রামের আর কারর সাথে মেলামেশা করতাম না । আমরা নিজেরাই খেলাধুলা করতাম । তবে আমি একটু গম্ভির প্রকৃতির ছিলাম । আমি কখনও বাড়ি থেকে বের হতাম না এবং কোনো খেলাধুলা করতাম না ।  বিকেল বেলায় দাদুর সাথে ক্রিকেট খেলতাম , সন্ধারপর আমার ভাই-বোন সবাই পড়তেন । তখন আমার পড়ার বয়স হয়নি তাই আমি দাদুর সাথে বসে বর্ন চিনতাম । তারপর রাত ৯টায় বাবা-চাচারা বাড়ি ফিরতেন । আমার জন্য অনেক চকলেট নিয়ে আসতেন । প্রতিদিন এতো চকলেট আনতেন যা সকল ভাই-বোন মিলে খেয়েও শেষ করতে পারতাম না । তারপর রাত ১০ টার সময় খাবার খেয়ে সবাই মিলে কিছুক্ষন গল্প করে তাদের প্রতিদিনের হিসাব করে রাত প্রায় সাড়ে এগারোটায় সবাই নিজেদের কক্ষে ঘুমান । আমাদের বাড়িতে প্রায় ৩০ টি সোবার ঘর, একটা বড় রান্নাঘর, একটা বিশাল বসার ঘর এবং দুইটা বড় খাবার ঘর। আমাদের বাড়ির চারদেয়ালের মধ্যে একটা বিশাল পুকুর ছিল তবে পুকুরের পানিতে কোনো কাদা ছিল না , কারণ পুকুরের নিচ পরযন্ত পাকা করা ছিল তাই পুকুরের পানিও পরিষ্কার ছিল । সকালে আমার সব ভাই-বোনরা পুকুরে গোসল করতেন আর আমি পাড়ে বসে তা উপভোগ করতাম । আমি সাঁতার জানতাম , আমার ভাই-বোন সবাই বলতো একসাথে গোসল করার জন্য একসাথে সাঁতার কাটার জন্য । তবে আমার তা ভাল লাগতো না । আমি দাদুর সাথে গোসল করতাম । এইভাবে অনেক আনন্দেই কেটেছিল আমার ছোটবেলা ।

তার কিছু বর্ষ কেটে যাওয়আর পর যখন আমার বয়স ৫বছর তখনই আমাকে স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় হয় ।এইদিনটার জন্য আমিখুব আগ্রহী ছিলাম । যেদিন আমি স্কুলে ভর্তি হই সেদিন সকালে আমাকে খুব  তাড়াতাড়ি আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে গোসল করিয়ে আমাকে একটি নতুন সাদা শার্ট , কালো পেন্ট এবং কালো রঙের টাই গলায় পড়িয়ে দেওয়া হল । তখন আমাদের দুইটি কার ছিল । একটিতে আমি,দাদু,বাবা এবং রাজু ভাইয়া আর অপরটিতে আমার চাচারা ছিলেন । একটা বৃহত আকৃতির স্কুলে নিয়ে গেলেন । আমার যতটুকু মনে হয় , এটা ছিল আমাদের গ্রাম থেকে কিছু দূরের একটি কে.জি. স্কুল । আমরা সবাই একসাথে স্কুলে প্রবেশ করলাম । কিছুক্ষন পরে আমি আমার ক্লাসে প্রবেশ করলাম । দাদু দরজার সামনে বসে ছিলেন আর সবাই চলে গিয়েছিলেন । ক্লাস শুরু হবে সকাল ১০টায় আর এখন ৯.১৩বাজে । অনেকেই আজ প্রথম স্কুলে এসেছে । আমি বসার জন্য একটি ভাল জায়গা খুঁজছি । সাধারনত এক ব্রেঞ্চে ৩জন করে বসবে । তারপর দেখলাম এক ব্রেঞ্চে এক ছেলে আর এক মেয়ে বসে আছে । মেয়েটির পাশের জায়গা খালি আছে এবং জায়গাটি ভাল ছিল । আমি জায়গার বসার জন্য তৈরি, ব্যাগটি রেখে আমি শুধু বসব, তখনই পাশের ছেলেটি বলে উঠল,

- ভাই, তুমি এখানে না বসলে হবে না ?

- আম এখানে বসলে কী সমস্যা ?

- দেখ ভাই আমি দুই বছর ধরে রিতাকে খেয়াল করছি, ওর কাছে কাউকে বসতে দেই না ।

- কে রিতা ?

- তুমি যার পাশে বসে আছ ।

- তুমি ওকে চেন ?

- কী বলছ ভাই ! আমি ওকে শুধু চিনি না, আমি ওকে ভালওবাসি এবং আমি চাই আমি ছাড়া কেউ যেন ওর পাশে না বসে ।

- আমাকে তাহলে কী করতে হবে ?

- তুমি যদি দয়া করে অন্য কোথাও গিয়ে বস ।

- আমি এখান থেকে উঠবো না আর তুমাকেও দূঃখ দেব না ।

- কিভাবে ?

- তুমি যদি মাঝামাঝি যাও তাহলে তাহলে আমি রিতার পাশেও বসব না । তারপর আমি আর রিতা জায়গা পরিবর্তন করলেই হয়ে যাবে ।

যেমন কথা তেমন কাজ ।  আমরা জায়গা পরিবর্তন করলাম । তারপরও আমার আর ছেলেটির সাথে অনেকক্ষন কথা হল । আমিই প্রথম বললাম,

- তোমার নাম কী?

- আমার নাম রাজিব । তোমার নাম কী বন্ধু।

- নাম না জেনেই আমাকে বন্ধু বললে ? আমার নাম সারফারাজ হোসাইন মিরাজ।

- দেখলে বন্ধু, তোমার এতো বড় নাম আমি ডাকতে পারবনা।

- কেন ! আমাকে শুধু মিরাজ বলে ডাক ?

- এটা অভদ্রতা হয়ে যাবে । আমিতো জানি না, তুমি আমার বড় হতে পার !

- তাহলে তুমি রিতাকে নাম ধরে ডাকছ কেন ?

- কারন ভবিষ্যতে রিতাতো আমার স্ত্রী হবে তাই ?

- তোমার সাথে কথায় পারবোনা বন্ধু!

- আর তোমার সাথে বুদ্ধিতে!

তার পর একে অপরের পরিবেরে সম্পর্কেও কথা বললাম । জানলাম রাজিব আর আমি একই গ্রামের । রাজিবের বাবা একজন উকিল । তারপর সকাল ১০টায় স্যার ক্লাসে এলেন, তিনি বললেন আমরা সবাই যেন উনাকে জনাব বলে ডাকি । কারণ স্যার এর চেয়ে জনাব বেশি সুভা দেয় ।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad